সাব্বির জাদিদের ‘পাপ’ পড়ে উঠে মনে হলো, এটা কি পড়লাম আমি! এ আবার কেমন উপন্যাস? যে উপন্যাসের সমাজের সঙ্গে আমার সমাজকে মেলাতে পারি না। উপন্যাসের চরিত্রের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই। চরিত্রগুলোর নাম যদিও পরিচিত, তবু বেশ অদ্ভুত। আকাশ, বাতাসি, পাহাড়, সাগরি, নদী, বৈশাখী, পল্লবীসহ অনেক নাম। এদের আচরণও এদের নামের মতো অদ্ভুত।
ছাউনির নিচে বসবাস হলেও এরা বন-জঙ্গলে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। বনের পশুদের সঙ্গেও এদের সখ্য রয়েছে। উপন্যাসের জায়গায় জায়গায় পশুপাখির সঙ্গে এদের অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ দেখে অবাক হয়েছি।
আমাদের মতো এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করলেও তাদের সমাজকাঠমো আমাদের চেয়ে ভিন্ন। মানুষে মানুষে যে সম্পর্ক, নারী-পুরুষের যে সম্পর্ক, এদের কাছে তার একটা অন্যরকম অর্থ রয়েছে!
এটি সময় থেকে ছিটকে পড়া একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার স্বপ্নের ঘোরে বিচরণ করার আখ্যান হলেও এর মধ্যে আমাদের সভ্য সমাজের ‘পাপ’ করার প্রবণতার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে ভিন্নভাবে, আদিম যুগের মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে, যা যুগপৎভাবে আমাদের জানান দেয়, মানুষের পদস্খলনের পুনঃপৌনিকতার, বেঁচে থাকার আশ্চর্য সব লড়াইয়ের।
‘কাম’ মানুষের স্বভাবজাত একটি মনোদৈহিক প্রবৃত্তির নাম।এই কামের সঙ্গে পাপের একটা সম্পর্ক আছে। উপন্যাসে এই কামকে উপজীব্য করে অনেক ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে। যার মধ্যে নর-নারীর পরস্পরকে কাছে পাওয়ার যে বাসনা, তা মূর্ত হয়ে ওঠে।
অজ্ঞতা, কল্পনা ও ভয়ভীতি থেকে আদিকালে মানুষ কিভাবে ধর্মের প্রতি ঝুঁকেছে, আর কিছু মানুষ কিভাবে তার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তারই একটা ধারণা পাওয়া যায় এই উপন্যাসের শেষের দিকে। যেখানে দেখা যায়, প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সাধারণ চুরির ঘটনা থেকে কিভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে একটি জনপদের মানুষেরা দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে, কিভাবে রক্তপিপাসু হয়ে ওঠে তারই একটি চিত্র।
সিনেমার মতো এই উপন্যাস শুরু হয়ে শেষ হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর এক অবিশ্বাস্য ঘটনার মধ্য দিয়ে। কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে পাপের মৌলিক ধারণা থেকে মানুষ ও ফেরেশতার একইসঙ্গে বসবাসের যে জগৎ রচনা করেছেন লেখক, তার মধ্যে একবার ঢুকলে শেষ না করে বের হওয়া যায় না। এক ধরনের ঘোর লাগা কাজ করে।
এখানে ফেরেশতা-বিষয়ক যে ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাকে ইসলাম ধর্ম থেকে নেওয়া হলেও এ ধর্মের ফেরেশতাদের সঙ্গে এই উপন্যাসের চরিত্রদের শারীরিক কিংবা আচরণগত কোনো মিল নেই।
উপন্যাসের লেখকের গদ্যশৈলী সহজ-সরল, প্রাণবন্ত। শাব্দিক-ভাষিক কিংবা বর্ণনাগত কোনো জটিলতাও নেই।একনাগাড়ে পড়ে শেষ করে ফেলা যায় এমন একটি উপন্যাস।
(পাপ-সাব্বির জাদিদ,ঐতিহ্য)
বি:দ্র: রিভিউটি 'চিন্তাসূত্রে' প্রকাশিত।লিংক:-http://www.chintasutra.com/2018/03/%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%aa-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%a4/
No comments:
Post a Comment