৪.
Translate
Tuesday, 5 August 2025
স্মৃতির কঙ্কাল ও জুলাইয়ের ভূত : এক অন্তর্বীক্ষণ
৪.
Thursday, 12 June 2025
লেখকের অভিজ্ঞতা ও শিল্পের পক্ষপাত : সৃষ্টির এক অনিবার্য শর্ত
অভিজ্ঞতা : সৃষ্টির বীজমন্ত্র
একজন লেখকের শৈশব, পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষা, ভ্রমণ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিচ্ছেদ – এই সবকিছুই তার লেখার উপকরণ। এই অভিজ্ঞতাগুলো লেখকের মস্তিষ্কে জমা হয় এবং তার ভেতরের জগতকে নির্মাণ করে। যখন তিনি লিখতে বসেন, এই ভেতরের জগতই শব্দে প্রাণ পায়। যেমন, একজন গ্রামীণ লেখকের লেখায় গ্রামের মাটির গন্ধ, প্রকৃতির রূপ, সহজ-সরল মানুষের জীবন উঠে আসে অবলীলায়। পক্ষান্তরে, শহুরে জীবনের জটিলতা, আধুনিক সম্পর্ক, বা অস্তিত্বের সংকট ফুটে ওঠে একজন নগর-কেন্দ্রিক লেখকের কলমে। এমনকি গভীর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিও অনেক সময় শিল্পীকে এমন এক অন্তর্দৃষ্টি দেয় যা তার সৃষ্টিকে অমর করে তোলে। এই অভিজ্ঞতাগুলোই লেখকের স্বকীয় কণ্ঠস্বর তৈরি করে, যা তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তোলে।
পক্ষপাত : সৃষ্টির অনিবার্য দিক
এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই আসে পক্ষপাত। প্রতিটি মানুষই তার নিজস্ব লেন্স দিয়ে পৃথিবীকে দেখে, যা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস, এবং মূল্যবোধ দ্বারা গঠিত। একজন লেখক যখন কোনো চরিত্র নির্মাণ করেন বা কোনো ঘটনার বর্ণনা দেন, তখন তার নিজস্ব বিশ্বাস এবং পক্ষপাত অজান্তেই তাতে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নারীবাদী লেখকের লেখায় নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি প্রাধান্য পেতে পারে, যেখানে হয়তো একজন রক্ষণশীল লেখকের লেখায় ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গ-ভূমিকা বেশি প্রতিফলিত হবে। এই ধরনের পক্ষপাত সব সময় নেতিবাচক নয়। বরং, এটি লেখকের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার কাজের মৌলিকতা প্রকাশ করে। পাঠক যখন একটি লেখা পড়েন, তখন তিনি লেখকের এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং সেই অনুযায়ী লেখাকে বিচার করেন।
সংবেদনশীলতা ও দায়বদ্ধতা : একটি নৈতিক প্রশ্ন
তবে, পক্ষপাতের একটি নেতিবাচক দিকও আছে। যখন এই পক্ষপাত অসংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে, নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা বা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে, তখনই তা সমালোচিত হয়। একজন লেখকের সামাজিক দায়বদ্ধতা হলো, তার লেখনী যেন কারো প্রতি অন্যায় বা অসম্মানজনক না হয়। দুর্ভাগ্যবশত, সকল মানুষ সমান সংবেদনশীলতা দেখাতে পারে না। অনেক সময় অজ্ঞতা বা ব্যক্তিগত কুসংস্কার থেকে এমন লেখা তৈরি হয় যা অন্যের ক্ষতি করে।
কিউরেটরদের ক্ষেত্রেও এই পক্ষপাত স্পষ্ট। একজন সাহিত্য সমালোচক তার নিজস্ব বিচারবোধ, রুচি, এবং সাহিত্যিক মানদণ্ড দিয়ে একটি লেখাকে মূল্যায়ন করেন। তার ব্যক্তিগত পক্ষপাত একটি লেখার গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, কিউরেটরের দায়িত্ব হলো তার পক্ষপাত সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং যথাসম্ভব বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টা করা, যদিও তা পুরোপুরি সম্ভব নাও হতে পারে।
ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা
লেখকের অভিজ্ঞতা তার সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। এটিই তার লেখাকে প্রাণবন্ত ও মৌলিক করে তোলে। আর এই অভিজ্ঞতার অনিবার্য ফলস্বরূপ জন্ম নেয় পক্ষপাত। এই পক্ষপাত দোষের নয়, যদি তা স্বচ্ছ হয় এবং ক্ষতিকর না হয়। প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পক্ষপাতকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি সৃষ্টি তৈরি করা যা একই সাথে শক্তিশালী এবং সংবেদনশীল। একজন লেখক বা শিল্পীর জন্য এটি একটি নিরন্তর যাত্রা, যেখানে ব্যক্তিগত সত্যের প্রকাশ এবং বৃহত্তর সামাজিক দায়িত্ববোধের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়।
স্মৃতির কঙ্কাল ও জুলাইয়ের ভূত : এক অন্তর্বীক্ষণ
১. এক বছর পেরিয়ে গেল, অথচ আমার ফেসবুকের সময়রেখা যেন থমকে আছে এক অদৃশ্য বিন্দুতে। হাসিনার পলায়ন কি কেবল একটি শাসনের শেষ ছিল, নাকি মুক্তিকামী ...

-
Illustration : fast-ink-y43tNhAVDNs-unsplash শিল্পীর সৃষ্টি, সে হোক কলমের আঁচড়ে সাহিত্য, তুলির ছোঁয়ায় চিত্রকর্ম, বা সুরের মূর্ছনায় সঙ্গীত...
-
কিছুদিন আগে মেহেদী উল্লাহর একটা লেখা পড়েছিলাম সমকালের কালের খেয়ায়। ‘ফলিত স্বপ্নের বাসনা’ নামে। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘গোসলের পুকুরসমূহ’ লেখা...