Translate

Tuesday, 14 May 2019

ইনতেজার হুসেইনের শ্রেষ্ঠগল্প


[১]
যে বইটা কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছি, সেটা আরো অনেক আগে শেষ হবার কথা ছিল । কিন্তু শেষ হয় নি । মাঝে মাঝে পাঠ থামাতে হয়েছে আমার । আর সেটা সঙ্গত কারণেই । কারণটি উল্লেখ করবার আগে এই বই নিয়ে দু'টি বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি । কেননা আমার পরবর্তী কথাগুলোর সাথে তাদের একট‍া সম্পর্ক আছে ।

প্রথমত, এই বইয়ের গল্পগুলো সহজপাচ্য নয় । যে কেউ এই গল্পগুলো পড়ে তৃপ্তি পাবে না । মোদ্দাকথা বাংলাদেশি পাঠকেরা যে ধরণের গল্প পড়তে অভ্যস্ত এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলো নানাদিক দিয়ে তার থেকে ভিন্নতর । দ্বিতীয়ত, এটি একটি অনুবাদ বই । অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে যে ভাষিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এইপর্যন্ত এসেছে; সেই পরিবর্তনটুকু বুঝে উঠবার মতো মননশীল পাঠচর্চা আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি ।
উল্লেখ্য, এখানে মোটাদাগে মধ্যবিত্ত পাঠকদের কথা বলা হচ্ছে । 

এবার এই বই নিয়ে আমার পাঠবিষয়ক কিছু ধারণার কথা বলি । সঙ্গত কারণটি সম্ভবত তার মধ্যে নিহিত আছে ।

[২]
ইনতেজার হুসেইনের গল্পের বিষয়বস্তু অভিনব, বর্ণনাভঙ্গি অনেকটা সাধারণ হলেও তাঁর নির্মাণশৈলী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ । তাঁর গল্প পড়ে প্রথমবারেই কেউ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারবে কিনা কিম্বা আদৌ কারোপক্ষে পুরোপুরি বুঝে উঠা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে কোনো পাঠকই হয়তো ইতিবাচক উত্তর দিতে পারবেন না । 

তাঁর গল্প বুঝে উঠাটা আসলেই কষ্টসাধ্য । এই বুঝে উঠাটাও আবার সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । তাই কোনো পাঠক যদি এই দাবী করেন যে, তিনি প্রথম পাঠেই উম্মোচন করে ফেলেছেন ইনতেজার হুসেইনের গল্পজগৎকে ; এক্ষেত্রে আমাদের জন্য সেটা একরকম আশ্চর্যজনক ঘটনায় হবে! বলতে দ্বিধা নেই যে আমি নিজেও তাঁর সব গল্প বুঝিনি । এক পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে গল্পগুলো বুঝে উঠার মতো প্রাপ্তমনস্ক হয়তো এখনো হইনি । 

তারপর হঠাৎ গল্পগুলোতে এমনভাবে ডুবে যায় যে; মনে হলো, যেন পুরোটা সময় জুড়ে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি এক নাগাড়ে আমাকে দিয়ে গল্পগুলো পড়িয়ে নিয়েছে!

[৩]
দেশভাগের ফলে শিকড়চ্যুত মানুষের তীব্র যন্ত্রণা আর বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা ধরা পড়েছে 'ভারতের চিঠি' গল্পে। 
দেশভাগের ঘটনা এবং অভিজ্ঞতা একজন বাস্তুচ্যুত মানুষের মনে কিরূপ প্রভাব ফেলে এবং একইসাথে তার বিপর্যয়জনিত সমস্যাগুলো কেমন? তা অসাধারণ কুশলতায় তুলে ধরেছেন লেখক এই গল্পটিতে। 
আর দেশত্যাগের ফলে একজন মানুষ  শুধুমাত্র যে তার পৈতৃক এক খন্ড জমি হারায়, একটি বাড়ি হারায় তাই নয়, একইসাথে সে হারায় তার জন্ম-জন্মান্তরের স্মৃতি ও সম্পর্ক, হারায় পূর্বপুরুষদের পদচিহ্ন। 
গল্পটিতে এসব মর্মান্তিক যন্ত্রণার কথাই ফুটে উঠেছে লেখকের নিজস্ব গদ্যভঙ্গিতে । 

মানুষের জীবনের, চিন্তার বিপুল রহস্যময়তাকে এক অদ্ভুত জটিল প্রক্রিয়ায় উম্মোচন করেছেন লেখক 'হলুদ কুকুর' গল্পটিতে। গল্পের হলুদ কুকুরটির ধারণাগত কোনো ব্যাখ্যা কি আদৌ করা সম্ভব?  এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়াটা আমার মতো পাঠকের জন্য বিব্রতকর  বৈকি। তারপরও হলুদ কুকুর আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে!

'সহযাত্রী' গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্রটির কোনো নাম নেই । ভুল পথে ভ্রমন করতে থাকা নামহীন এই যাত্রীর সাথে পাঠক তার পথযাত্রার সঙ্গী হলেও শেষপর্যন্ত  ঐ যাত্রীর মতো পাঠকেরও কোনো স্টপেজে নামা সম্ভব হয় না । উদ্ভ্রান্ত ঐ যাত্রীর মতো আমরা পাঠকেরাও শুধু অবলোকন করতে থাকি সময়ের আবর্তে ঘু্র্ণায়মান সেইসব মানুষদের মুখচ্ছবি যারা একটা সময়কালকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে নানাভাবে পথভোলা মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠে! 

'আফসোসের শহর' গল্পে ভুলে যাওয়া ইতিহাসের চেতনাগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে স্মৃতিচারণ করতে থাকা তিনজন মৃতের পারস্পরিক সংলাপ আমাদের ইতিহাসের অনেক অনুষঙ্গকে স্মরণ করিয়ে দেয় । 

'ঘুম' গল্পে যুদ্ধ ফেরত সৈনিকের জবানিতে যুদ্ধকালীন নির্দয় সময়ের পাঠ নিতে গিয়ে গল্পের চরিত্ররা ক্লান্ত-অবসাগ্রস্থ সৈনিকটির মুখে বিস্মৃতির কবলে পড়া যে ঘটনার কথা জানতে পারে তা শেষপর্যন্ত যে চেতনাহীন অভিজ্ঞতায় পর্যবসিত হয়েছে গল্পের শেষে এসে সেটা আবিষ্কার করতে আমাদের তেমন অসুবিধা হয় না ।

'শেষ মানুষ' ও 'কানা দাজ্জাল' গল্প দু'টিকে উন্মোচন করতে না পারার ব্যর্থতাকে আমি আমার পাঠসীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখার চেষ্টা করেছি । তারপরও এতসব বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের যে অসামান্য সমন্বয় ঘটিয়েছেন লেখক এই দুই গল্পে, তা লেখকের স্বাতন্ত্র্যতা ও নিজস্ব প্রবণতা হিসেবে ধরে নিতে সমস্যা হয় না ।

[৪]
এই বইয়ের গল্পগুলোতে সব কথা বলে দেওয়া নেয়, অনেক বিষয়ই লেখক ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের জন্য । পাঠকভেদে যদিও এই বুঝায় তারতম্য ঘটবে । তারপরও পাঠশেষে গল্পের মৌলিক আবেদন শেষপর্যন্ত একই থাকবে বলে আশা করা যায় । বিশেষ করে যেখানে গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থিত আছে দেশভাগ, স্বাধীনতা আর ধর্ম ও রাজনীতির রক্তাক্ত ইতিহাসের বহুমাত্রিক বয়ান ।

ইনতেজার যে ভাষা, সংলাপ ব্যবহার করে তাঁর গল্পগুলোকে হাজির করেছেন, তা আমাদের তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর প্রতি প্রচন্ড অাগ্রহী করে তুলে ; একইসাথে তিনি তাঁর গল্পে যে আবহ তৈরি করেছেন এবং যেভাবে প্রতীক, উপমা ও মিথের ব্যবহার করেছেন তা যুগপৎভাবে তাঁর সমস্ত সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে  আমাদের যথেষ্ট কৌতুহলী করে তুলে ।


বই সম্পর্কে ~
নাম - ইনতেজার হুসেইনের শ্রেষ্ঠগল্প
অনুবাদ - সালেহ ফুয়াদ
প্রচ্ছদ - ধ্রুব এষ
প্রকাশক - ঐতিহ্য
মূল্য - ১৫০ টাকা

Sunday, 12 May 2019

একটি শোক সংবাদ


সাব্বির জাদিদের গল্পগ্রন্থ 'একটি শোক সংবাদ' সম্প্রতি আমার এক নতুনতর পাঠ-অভিজ্ঞতা । বিষয়বস্তু সাপেক্ষে গ্রন্থভূক্ত প্রতিটি গল্পই ছিল চমকপ্রদ । এসব গল্পে জনজীবনের অচ্যুত দিকগুলি উম্মোচন করার পাশাপাশি লেখক আলো ফেলেছেন এর সাথে জড়িয়ে থাকা সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রচলিত সব নিয়ম-নীতি-রীতি-রেওয়াজের উপরও । যা পাঠকদের নিত্যনৈমত্তিক জীবন-পদ্ধতির বাইরে গিয়ে  নতুন করে ভাবতে শেখায় ।
গল্পগুলোর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কতক আখ্যান শুধুমাত্র এর ব্যতিক্রমধর্মীতার জন্য পাঠকের আলাদা মনোযোগের দাবিদার ।
একইসাথে কিছু গল্পের পরিণতি এতই নাটকীয় যে, প্রাপ্তমনস্ক পাঠকরা হয়তো কিছুটা দ্বিধান্বিতভাবে এর আকস্মিকতার কথা স্বীকার করবেন, কিন্তু সাধারণ পাঠকমাত্রই  সেইসব আকস্মিকতায় তীব্রভাবে আলোড়িত হবেন ।

গল্পপ্রসঙ্গে...
সাব্বির জাদিদের গল্পগুলোর ভাষা সহজ-সরল প্রাণবন্ত । তাঁর গল্পের নির্মাণশৈলী ও বর্ণনাভঙ্গি আকর্ষণীয় । যে কারণে গল্পগুলোর আঙ্গিকে, বিষয়ে বিচিত্রতা থাকলেও তা পাঠকের কাছে জটিলতর ঠেকে না ।
বইটা পড়া শুরু করেছিলাম শেষের দিক থেকে, সর্বশেষ গল্প 'পড়শি' দিয়ে ।
গল্পটি জীবনের সায়হ্নে এসে মূমুর্ষ অবস্থায় স্মৃতিচারণ করতে থাকা এক হতভাগ্য বৃদ্ধের । যে কিনা একদিকে পোড় খাওয়া জীবনের সর্বশেষ সংকটময় পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে থাকে, অন্যদিকে হন্যে হয়ে স্মৃতি হাতড়ে কি যেন খুঁজতে থাকে । এমন সময় হঠাৎ অাশ্চর্য হয়ে দেখি যে, তার মধ্যে ধর্মবোধ-ধর্মানুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে । ফলস্বরূপ নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা এমন সহায়-সম্বলহীন একজন বৃদ্ধকে দেখি, যে কিনা তার আত্মিক প্রশান্তিকে ত্বরান্বিত করছে এই ভেবে যে, সে মসজিদের পড়শি হওয়ার কারণে মৃত্যুকালে হলেও আল্লাহর কালাম শুনে যেতে প‍ারছে!
মানুষের জীবনে আধ্যাত্মিক ধ্যান-ধারণা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করে এবং এর মনস্তত্বাত্ত্বিক দিকটি যে কতোটা গভীর 'পড়শি' গল্পটি পড়ে তার কিছুটা হলেও অনুমান করা সম্ভব।

'জাতক ও জন্মভূমি' এবং 'যতিচিহ্ন' গল্প দু'টির পরিণিতি গ্রন্থভূক্ত বাকী গল্পগুলির পরিণতির চেয়ে ভিন্ন । সামনে ঠিক কি হবে সেটা আগে থেকে বুঝা না গেলেও এমনকি গল্পের কাহিনির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া সত্ত্বেও গল্প দু'টির  পরিণতির আকস্মিকতার দিক দিয়ে কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় । যেমন - 'জাতক ও জন্মভূমি' গল্পে পোয়াতি নাসরিনকে নিয়ে তার পরিবারের অস্থিরতা, পারিপার্শ্বিক সংকটময় অবস্থা ও সর্বোপরি রতনের মা'র আঁতুড়ঘরে অসফল হওয়াটার সাথে নবজাতকের জরায়ুর পর্দা খামচে ধরে থাকার সম্পর্কটা যেমন অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ছিল, ঠিক তেমনি ' যতিচিহ্ন' গল্পের নায়ক (নাকি খলনায়ক) বাদল ওরফে বদু তার সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস-সংস্কার-ধারণা হেতু হঠাৎ  উদ্ভূত  এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ধর্মালয়ে বিপুল প্রভাব-প্রতিপত্তি সাথে নিয়ে  যে তান্ডব চালায় তার সাথে শেষ মুহুর্তে পল্টু কর্তৃক প্রতিমা ভাঙার প্রাক্কালে বদুর চোখে সেই প্রতিমার মুখাবয়বে তার প্রেয়সী ফাতেমার মুখচ্ছবি ভেসে উঠাটা একই সাথে আমাদের জন্য সমান অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ছিল ।
লৌকিক-অলৌকিকতার এই সমান্তরালে চলাটা যেনবা আমাদের চোখের সামনেই!

'দূরত্ব' গল্পে দুইজন ঘনিষ্ঠবন্ধুর মাঝে তাদের মাদ্রাসার শিক্ষাজীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার কারণে পরবর্তীতে যে শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়, তারই আখ্যান বর্ণিত হয়েছে ।  যে আখ্যানে রয়েছে ধর্মীয় মতে আপাত ভিন্নতা থাকার কারণে সৃষ্ট বৃহত্তর গোষ্ঠীভিত্তিক মতাদর্শিক নানাবিধ সমস্যার কথা । যেগুলো নিতান্তই  হাস্যকর !

'দোলায়িত জীবনের গান' ও ' একটি পুঁজিবাদী গল্প' তে প্রকাশ পেয়েছে যথাক্রমে নাগরিক জীবনের বিপুল রহস্যময়তা, প্রাত্যহিক জীবনের অনাহুত বিড়ম্বনা আর শ্রেণীবৈষম্যের কারণে সৃষ্টি হওয়া ভেদাভেদ এক রাখালের মনে কিভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলে তারই ইতিবৃত্ত ।
'সূর্য না উঠা জনপদের গল্প' তে অসাধারণ ইঙ্গিময়তায় সামাজিক-রাষ্ট্রিক এক কঠিন সত্যকে রূপায়ণ করেছেন লেখক তাঁর অসামান্য গদ্যভঙ্গিতে ।
 পাঠককে তিনি নিয়ে গেছেন বিপর্যয়গ্রস্থ এক পৃথিবীতে । যে পৃথিবীতে স্বপ্নঘোরগ্রস্থ মানুষেরা তাদের এই সংকটমুখর ক্লান্ত জীবনকে পাশ কাটিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এক স্বাভাবিক-মানবিক জীবন যাপন করতে চান ।
 অদ্ভূত কোমল-মায়াময় এক অনুভূতি হয়েছিল 'যখন এসেছিলে' গল্পটি পড়ে । মন্ত্রমুগ্ধের মতো এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করি পুরো গল্পটা । এই গল্প বাস্তবতাকে ছাপিয়ে লেখকের গভীর আখাঙ্ক্ষাকে মূর্ত করে তুলেছে প্রশ্নহীনভাবে!
এই বইয়ের অন্যসব গল্পের তুলনায় 'কুত্তা' গল্পটিকে অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে । গল্পটিতে গ্লানিময় জীবনের একটা চিত্র পাওয়া যায় যদিও । তারপরও  পড়ে তৃপ্তি পাইনি ।

বইয়ের নামগল্প 'একটি শোক সংবাদ' নিয়ে আলাদা একটা আগ্রহ ছিল । গল্পটিতে লেখক অন্যচোখে নির্মাণ করেছেন মৃত্যুবিষয়ক ধারণাকে । যা পড়ে ক্ষণিকের জন্য বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ি ।

শেষকথা...
সমাজবাস্তবতার পাশাপাশি মানুষের বিচিত্র সব মনোভঙ্গি বহুমাত্রিকভাবে চিত্রিত হয়েছে এই বইয়ের গল্পগুলোতে । যাতে ক্রমশ দৃশ্যমান হয়েছে নানাবিধ সমস্যা-জর্জরিত তৃতীয় বিশ্বের একটি ক্ষুদ্রতম দেশের অন্ত্যজ মানুষদের ভাগ্যাহত, যন্ত্রণাদগ্ধ তীব্র সংকটময় বিপন্ন সব মনোভূবনের করুণ প্রতিচ্ছবি ।


বই সম্পর্কে ~ 
নাম - একটি শোক সংবাদ
লেখক - সাব্বির জাদিদ
প্রচ্ছদ - কাজী জুবাইর মাহমুদ
প্রকাশক - ঐতিহ্য
মূল্য - ১৫০ টাকা

Wednesday, 1 May 2019

আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে


পাঠের পূর্বে...
কয়েকদিন যাবৎ একটা বই পড়ব পড়ব বলে মনে মনে ঠিক করেছি । বইটার নাম 'আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে' । শাহাদুজ্জামানের ডকুফিকশন । লেখকের লেখার সঙ্গে আমার যে বোঝাপড়া ; তার থেকে ধারণা করি, এই বইটি ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে কে নিয়ে লেখা কোন জীবনীমূলক উপন্যাস । লেখকের প্রকাশিত অন্যান্য উপন্যাসের বিষয়বস্তু সাপেক্ষে আশা করি আমার এই চিন্তা অমূলক নয় । উল্লেখ্য, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বর্ণাঢ্য বিপ্লবী জীবন সম্পর্কে আমার তেমন কোন জানাশোনা  কিম্বা পূর্বপাঠ নেই । সেদিক থেকে এই বইটি ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে লেখা আমার পড়া প্রথম কোন বই । এটা ছাড়াও বইটি সংগ্রহ আরো একটি কারণ আছে । শাহাদুজ্জামানের এক সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারি, তাঁর লেখালেখি বামচিন্তাধারায় প্রভাবিত । সেই হিসেবে বোধকরি এই বই পড়ে তার চিন্তা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাব । ইতোমধ্যে কয়েকটি ছোটগল্পে তার লেখালেখির এই দর্শন সম্পর্কে জানতে পেরেছি । যদিও সেটা বিচ্ছিন্নভাবে । যাইহোক,আশা করি পাঠটি তাৎপর্যপূর্ণ হবে!

মধ্যপাঠে...
বইটার মাঝে মাঝে এসে মনে হলো আমি যেটা জ‍নতে চাইছি সেটা এখনো আমাকে জানানো হয়নি । আমি যদিও ক্যাস্ট্রোর ছেলেবেলা নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিলাম না । তারপরও কিউবার বিপ্লবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখক মারফত সেটা জানতে পেরেছি কিছুটা । 
কিউবার বিপ্লবের পটভূমি জানা না থাকার কারণে আমার জন্য তাই বইয়ের প্রথমার্ধ খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ছিল । এবং ক্যাস্ট্রোর পারিপার্শ্বিক সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা তার বিপ্লবী মানস গঠনে কিভাবে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, একইসাথে ফিকশনের ফর্ম অনুযায়ী জীবনের শেষ প্র‌ান্তে এসে ক্যাস্ট্রোর নিজের মুখে তার ছেলেবেলার কাহিনী শুনতে এবং সেইসময়কার তার সমাজবীক্ষণকে, জীবনবীক্ষণকে বুঝতে এই পর্যন্ত বেশ সহায়ক ছিল বইটি ।

পাঠশেষে...
'আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে' পাঠান্তে আমি যেসব বিষয় জেনেছি, তার মধ্যে হোসে মার্তি, সিয়েরা মিয়েস্ত্রা ও ল্যাফটেন্যান্ট পেড্রো, এই তিনটি নাম খুবই উজ্জ্বলভাবে আমার মনে দাগ কেটেছে ।
যদিও ক্যাস্ট্রোর ঐসব অভিযানের অভিজ্ঞতার বর্ণনা, যুদ্ধদিনের রোমাঞ্চকর স্মৃতিচারণমূলক বৈঠকি আলোচনাও সমান্তরালে দাগ উঠেছে মনে । তারপরও ঐ তিনটি নাম আলাদা আলাদাভাবে স্মৃতিতে বসে গেছে ।

হোসে মার্তি
কিউবার মানুষদের জন্য মার্তি এক বিরাট অনুপ্রেরণার নাম ।এই মার্তি-ই স্পেনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র লড়াইয়ে নেমেছিলেন কিউবার হয়ে । যদিও পরাজিত হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে । তারপরও তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল, তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীরা তাঁর কবিতাকে বুকে ধারণ করে কিউবাকে মুক্ত করেছিলেন পরবর্তীতে । মার্তির সেই বিখ্যাত কবিতাটি -
পাহাড়ের  ঢাল বেয়ে যেমন নেমে আসে পাথর
সত্যমত বাধা ঠেলে ঠেলে সে পৌঁছে যায় গন্তব্যে
কেউ হয়তো কখনো শ্লত করে দিতে পারে তার গতি
কিন্তু চিরতরে থামানো?
অসম্ভব । একেবারেই অসম্ভব 
এই কবিতাটি ক্যাস্ট্রো আদালতে দাঁড়িয়ে বিচারকের সামনে আবৃত্তি করেছিলেন ।

সিয়েরা মিয়েস্ত্রা
এই পাহাড়টির সাথে এবং এখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠিটির সাথে ক্যাস্ট্রোর অনেক স্মৃতি আছে । যেগুলো বেশ রোমাঞ্চকর ।

ল্যাফটেনেন্ট পেড্রো
এই ল্যাফটেনেন্টই ক্যস্ট্রোকে নতুন জীবন দান করেছিলেন । তিনি না বাঁচালে ক্যাস্ট্রো নির্ঘাত বাতিস্তার সৈন্যদের হাতে মারা পড়তেন । কিউবার ইতিহাসও তখন অন্যভাবে লিখিত হতো ।

পুনশ্চ - পাঠশেষে একটা অতৃপ্তি শেষপর্যন্ত থেকেই গেছে । হয়তো বইটা নিয়ে আমার আগ্রহ আর প্রত্যশা আরো অনেক বেশি ছিল বলেই এমনটা হয়েছে ।

বই সম্পর্কে ~
নাম - আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে
লেখক - শাহাদুজ্জামান
প্রচ্ছদ - শিবু কুমার শীল
প্রকাশক - ঐতিহ্য
মূল্য - ১৪০ টাকা

স্মৃতির কঙ্কাল ও জুলাইয়ের ভূত : এক অন্তর্বীক্ষণ

১. এক বছর পেরিয়ে গেল, অথচ আমার ফেসবুকের সময়রেখা যেন থমকে আছে এক অদৃশ্য বিন্দুতে। হাসিনার পলায়ন কি কেবল একটি শাসনের শেষ ছিল, নাকি মুক্তিকামী ...